মধ্যপ্রাচ্য Gratitude to "Daily Prothom-Alo"
| আপডেট: ০০:০৫, মার্চ ২৯, ২০১৪ | প্রিন্ট সংস্কর
কয়েক বছর ধরে সৌদি
আরবের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের সুরক্ষাদাতা যুক্তরাষ্ট্রের দূরত্ব ক্রমেই বেড়েছে।
মিসরে হোসনি মোবারকের পতনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন এবং পরবর্তী সময়ে মুসলিম
ব্রাদারহুড সরকারকে মেনে নেওয়ার বিষয়টিকে সৌদি আরব বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখেছে।
তারপর এল সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারের বিষাক্ত গ্যাস প্রয়োগ করার
জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নিজের ঘোষিত ‘লাল
রেখা’ বাস্তবায়নে অস্বীকৃতি। তবে চূড়ান্ত আঘাতটি হচ্ছে ইরানের পারমাণবিক
কর্মসূচির বিষয়ে সাম্প্রতিক সমঝোতায় যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন। যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে
সৌদি আরবের ক্রমবর্ধমান আস্থাহীনতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, যখনই সৌদি আরব
তার অস্তিত্বের প্রতি হুমকি অনুভব করেছে (দেশটি ইরানের আঞ্চলিক উচ্চাভিলাষকে সেই
রকম একটি হুমকি মনে করে), তখনই সে নিজেকে রক্ষার জন্য বাইরের শক্তির ওপর নির্ভর করেছে।
কিন্তু সৌদি আরব যদি আর যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করতে না পারে, তাহলে তারা যথেষ্ট সামরিক শক্তি প্রদর্শনের জন্য আর কার কাছে যাবে? এই প্রশ্নের জবাবটি দৃশ্যত পাকিস্তান, যে দেশটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে বলে অবশিষ্ট বিশ্ব মনে করে। পাকিস্তান অতীতে সংকটের সময় সামরিক ও নিরাপত্তা-সহযোগিতা পাঠানোর মাধ্যমে সৌদি আরবের স্বার্থ রক্ষা করেছে। ১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের সময় পাকিস্তান ৩০ হাজার সেনা সৌদি আরবে পাঠায়। ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ওই পাকিস্তানি সেনারা সৌদি আরবে থেকে গিয়েছিল।
১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধের সময়ও সৌদি আরব কয়েক হাজার পাকিস্তানি সেনা মোতায়েন করেছিল। ২০১৪ সালের শুরুতে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৌদ আল ফয়সাল ও যুবরাজ সালমান যৌথভাবে অস্ত্র উৎপাদন বিষয়ে সামরিক চুক্তি নবায়নের জন্য পাকিস্তান সফর করেন। এই সফরের আরেকটি লক্ষ্য ছিল ৩০ হাজার পাকিস্তানি সেনা ও সামরিক উপদেষ্টা সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়ার প্রারম্ভিক কাজটি করা।
কেন পাকিস্তান আর কেনই
বা এখনই?
সৌদি শাসকেরা মনে করেন, তিনটি আঞ্চলিক শক্তি মধ্যপ্রাচ্যে প্রবল প্রভাব বিস্তারে সক্ষম। তারা হলো ইরান, তুরস্ক ও পাকিস্তান। ইরানকে সৌদিরা তাদের প্রধান আদর্শিক শত্রু হিসেবে দেখে এবং জানে যে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রাধান্য বিস্তারের অভিলাষ আছে। তাই ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের জোটবদ্ধ হওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। অন্যদিকে, তুরস্ককে সুন্নি মুসলিম নেতৃত্বের অন্যতম দাবিদার বলে মনে করা হয়। দীর্ঘদিন এই অবস্থান ছিল অটোমান সাম্রাজ্যের দখলে। তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ‘নব্য অটোমান’ সাম্রাজ্যের উচ্চাভিলাষ পোষণ করেন বলে প্রায়ই যে কথা বলা হয়, তাতে ওই সৌদিদের সঙ্গে তুরস্কের প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অটোমান দুটি ঐতিহাসিক সৌদি/ওয়াহাবি রাষ্ট্রের পতন ঘটিয়েছিল। অটোমান সাম্রাজ্যের সমর্থন নিয়ে প্রথম রাষ্ট্রটি (১৭৪৫ থেকে ১৮১৮ সালে) ধ্বংস করেন মিসরের মেহমেত আলী। দ্বিতীয়টিকেও (খ্রিষ্টপূর্ব ১৮২৪ থেকে ১৮৯১ সালে) পরাস্ত করে অটোমানরা।
পক্ষান্তরে, পাকিস্তানের সঙ্গে সৌদি আরবের কোনো সমস্যার ইতিহাস নেই; বরং সৌদি শাসকেরা পাকিস্তান রাষ্ট্রকে সহায়তা দিয়ে গেছেন। তাঁরা ১৯৯৯ সালে নওয়াজ শরিফের সরকার সামরিক অভ্যুত্থানে উৎখাত হওয়ার পর ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীকে দীর্ঘদিন উচ্চ আতিথেয়তা দিয়েছেন।
বস্তুত, পাকিস্তানের স্বাধীনতার শুরুর বছরগুলো থেকেই সৌদি আরব দেশটিতে বিপুল বিনিয়োগ করেছে। ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পাকিস্তান। এতে বিস্মিত হওয়ার কোনো কারণ নেই যে সেই পাকিস্তানের নেতারা ইসলামের উৎসভূমি সৌদি আরব থেকে সমর্থন কামনা করবেন। আর সৌদি আরব ‘বিশুদ্ধ ভূখণ্ডে’ (পাকিস্তান) তার ওয়াহাবি শিক্ষা চালান করেছে, যা চূড়ান্ত পর্যায়ে তালেবান ও অন্যদের ইসলামি উগ্রপন্থা ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় মদদ জুগিয়েছে। সৌদি আরব পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচিতেও বিনিয়োগ করেছে। পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচির জনক আবদুল কাদের খানের গবেষণায় সরাসরি অর্থায়ন করেছে দেশটি। তবে পাকিস্তানের পারমাণবিক সক্ষমতা থেকে সৌদি আরবের লাভবান হওয়ার প্রত্যাশা ২০০৩ সালে ব্যাহত হয়। পাকিস্তান সৌদি আরবের কাছে পারমাণবিক বিষয়ে জ্ঞান এবং আরও কিছু বিষয় হস্তান্তর করতে পারে—এটা ধরা পড়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে।
তা ছাড়া পাকিস্তান গত বছরগুলোতে সৌদি আরবে যেসব সেনা পাঠিয়েছে, তাদের সাধারণভাবে অনুগত বলে মনে করা হয়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অন্তত ৩০ শতাংশ সদস্য শিয়া মুসলমান; কিন্তু সৌদি আরব তাদের নেয় না, শুধু সুন্নি সেনাসদস্যদের নেয়। পাকিস্তানও সানন্দে শুধু সুন্নি সেনাদেরই সৌদি আরবে পাঠায়। তারা সে দেশে থাকে ভাড়াটে যোদ্ধা হিসেবে এবং অতিথি শ্রমিকের মর্যাদা পায়। সৌদি আরবের এখনকার পরিকল্পনার একটি অংশ হলো পাকিস্তানকে গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসি) নতুন যৌথ বাহিনীর মেরুদণ্ড হিসেবে ব্যবহার করা। বাহরাইনে ২০১১ সালে শিয়া বিদ্রোহ দমনে সৌদি কমান্ডের অধীনে পাকিস্তানি সেনারা কাজ করেছে। সৌদিরা এখন উপসাগরীয় অঞ্চলের যেকোনো স্থানে যেকোনো সময় ইসলামপন্থী ও শিয়াদের উসকানি দমন করতে একটি বাহিনী প্রস্তুত রাখতে চায়। ওই অঞ্চলের অস্তিত্বের প্রতি হুমকি সৃষ্টি হলে (বিশেষ করে ইরানের সঙ্গে সংঘাত) পাকিস্তান সৌদি আরবকে এমন ধরনের ‘প্রাণঘাতী সুরক্ষা’ দেবে, যা তাকে পশ্চিমারা দিচ্ছে না।
কিন্তু পাকিস্তান আসলে সৌদি আরবের নিরাপত্তা কতটা নিশ্চিত করতে পারবে? সুনির্দিষ্টভাবে বললে, ইরানের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের সম্ভাব্য সংঘাতের ক্ষেত্রে পাকিস্তান সৌদি আরবকে কতটা শক্তি জোগাতে পারবে? পাকিস্তান নিজেই নানা ধরনের বিভক্তির শিকার। দেশটির ভেতরে সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা চলছে লাগামহীনভাবে। এই অবস্থায় দেশটির সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বজায় রাখা এবং ভারতের সঙ্গে কোনো সংঘাত দেখা দিলে (পাকিস্তানি জেনারেলরা যে চিন্তায় আচ্ছন্ন) তা মোকাবিলা করার যথেষ্ট প্রস্তুতি রাখার পাশাপাশি সৌদি আরবের প্রতিরক্ষায় ভূমিকা রাখার সামর্থ্য নেই। জাতিগোষ্ঠীগত যুদ্ধ বেধে গেলে পাকিস্তান যদি সুন্নি সৌদিদের সহায়তা করে, তাহলে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিয়া মুসলমান আছে, তারা ভয়ংকর বিক্ষুব্ধ শিয়া সেনাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারে। অন্যদিকে পাকিস্তানের অত্যন্ত শক্তিশালী রাজনৈতিক দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি বর্তমানে বিরোধী দলে থাকলেও ইরানের সঙ্গে তাদের অনেক স্বার্থসংশ্লিষ্ট মিল আছে।
কাজেই পাকিস্তানের সঙ্গে সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠতর সামরিক সহযোগিতার কৌশলগত মূল্য খুবই প্রশ্নসাপেক্ষ হলেও সৌদি আরবের হাতে বিকল্প আছে সামান্যই। মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুডকে সমর্থনের দায়ে কাতারের বহিষ্কার হওয়া এবং ওমানের স্বেচ্ছায় সরে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে জিসিসি বস্তুত ভেঙে পড়ছে। এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপারে সৌদি আরবের ক্রমবর্ধমান অবিশ্বাস যুক্ত হয়ে বিচ্ছিন্নতার বোধটি ক্রমেই বাড়ছে।
কোনো দেশের সামনে অস্তিত্বের সংকটের হুমকি দেখা দিলে সে মিত্র হিসেবে পাকিস্তানের কথা ভাববে—এটা বোধ হয় ভালো ভাবনা নয়। কিন্তু সৌদি আরব এখন এমনটাই ভাবছে, কারণ তার সময় ঘনিয়ে আসছে।
ইংরেজি থেকে অনূদিত; স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
সৌদি শাসকেরা মনে করেন, তিনটি আঞ্চলিক শক্তি মধ্যপ্রাচ্যে প্রবল প্রভাব বিস্তারে সক্ষম। তারা হলো ইরান, তুরস্ক ও পাকিস্তান। ইরানকে সৌদিরা তাদের প্রধান আদর্শিক শত্রু হিসেবে দেখে এবং জানে যে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রাধান্য বিস্তারের অভিলাষ আছে। তাই ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের জোটবদ্ধ হওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। অন্যদিকে, তুরস্ককে সুন্নি মুসলিম নেতৃত্বের অন্যতম দাবিদার বলে মনে করা হয়। দীর্ঘদিন এই অবস্থান ছিল অটোমান সাম্রাজ্যের দখলে। তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ‘নব্য অটোমান’ সাম্রাজ্যের উচ্চাভিলাষ পোষণ করেন বলে প্রায়ই যে কথা বলা হয়, তাতে ওই সৌদিদের সঙ্গে তুরস্কের প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অটোমান দুটি ঐতিহাসিক সৌদি/ওয়াহাবি রাষ্ট্রের পতন ঘটিয়েছিল। অটোমান সাম্রাজ্যের সমর্থন নিয়ে প্রথম রাষ্ট্রটি (১৭৪৫ থেকে ১৮১৮ সালে) ধ্বংস করেন মিসরের মেহমেত আলী। দ্বিতীয়টিকেও (খ্রিষ্টপূর্ব ১৮২৪ থেকে ১৮৯১ সালে) পরাস্ত করে অটোমানরা।
পক্ষান্তরে, পাকিস্তানের সঙ্গে সৌদি আরবের কোনো সমস্যার ইতিহাস নেই; বরং সৌদি শাসকেরা পাকিস্তান রাষ্ট্রকে সহায়তা দিয়ে গেছেন। তাঁরা ১৯৯৯ সালে নওয়াজ শরিফের সরকার সামরিক অভ্যুত্থানে উৎখাত হওয়ার পর ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীকে দীর্ঘদিন উচ্চ আতিথেয়তা দিয়েছেন।
বস্তুত, পাকিস্তানের স্বাধীনতার শুরুর বছরগুলো থেকেই সৌদি আরব দেশটিতে বিপুল বিনিয়োগ করেছে। ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পাকিস্তান। এতে বিস্মিত হওয়ার কোনো কারণ নেই যে সেই পাকিস্তানের নেতারা ইসলামের উৎসভূমি সৌদি আরব থেকে সমর্থন কামনা করবেন। আর সৌদি আরব ‘বিশুদ্ধ ভূখণ্ডে’ (পাকিস্তান) তার ওয়াহাবি শিক্ষা চালান করেছে, যা চূড়ান্ত পর্যায়ে তালেবান ও অন্যদের ইসলামি উগ্রপন্থা ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় মদদ জুগিয়েছে। সৌদি আরব পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচিতেও বিনিয়োগ করেছে। পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচির জনক আবদুল কাদের খানের গবেষণায় সরাসরি অর্থায়ন করেছে দেশটি। তবে পাকিস্তানের পারমাণবিক সক্ষমতা থেকে সৌদি আরবের লাভবান হওয়ার প্রত্যাশা ২০০৩ সালে ব্যাহত হয়। পাকিস্তান সৌদি আরবের কাছে পারমাণবিক বিষয়ে জ্ঞান এবং আরও কিছু বিষয় হস্তান্তর করতে পারে—এটা ধরা পড়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে।
তা ছাড়া পাকিস্তান গত বছরগুলোতে সৌদি আরবে যেসব সেনা পাঠিয়েছে, তাদের সাধারণভাবে অনুগত বলে মনে করা হয়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অন্তত ৩০ শতাংশ সদস্য শিয়া মুসলমান; কিন্তু সৌদি আরব তাদের নেয় না, শুধু সুন্নি সেনাসদস্যদের নেয়। পাকিস্তানও সানন্দে শুধু সুন্নি সেনাদেরই সৌদি আরবে পাঠায়। তারা সে দেশে থাকে ভাড়াটে যোদ্ধা হিসেবে এবং অতিথি শ্রমিকের মর্যাদা পায়। সৌদি আরবের এখনকার পরিকল্পনার একটি অংশ হলো পাকিস্তানকে গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসি) নতুন যৌথ বাহিনীর মেরুদণ্ড হিসেবে ব্যবহার করা। বাহরাইনে ২০১১ সালে শিয়া বিদ্রোহ দমনে সৌদি কমান্ডের অধীনে পাকিস্তানি সেনারা কাজ করেছে। সৌদিরা এখন উপসাগরীয় অঞ্চলের যেকোনো স্থানে যেকোনো সময় ইসলামপন্থী ও শিয়াদের উসকানি দমন করতে একটি বাহিনী প্রস্তুত রাখতে চায়। ওই অঞ্চলের অস্তিত্বের প্রতি হুমকি সৃষ্টি হলে (বিশেষ করে ইরানের সঙ্গে সংঘাত) পাকিস্তান সৌদি আরবকে এমন ধরনের ‘প্রাণঘাতী সুরক্ষা’ দেবে, যা তাকে পশ্চিমারা দিচ্ছে না।
কিন্তু পাকিস্তান আসলে সৌদি আরবের নিরাপত্তা কতটা নিশ্চিত করতে পারবে? সুনির্দিষ্টভাবে বললে, ইরানের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের সম্ভাব্য সংঘাতের ক্ষেত্রে পাকিস্তান সৌদি আরবকে কতটা শক্তি জোগাতে পারবে? পাকিস্তান নিজেই নানা ধরনের বিভক্তির শিকার। দেশটির ভেতরে সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা চলছে লাগামহীনভাবে। এই অবস্থায় দেশটির সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বজায় রাখা এবং ভারতের সঙ্গে কোনো সংঘাত দেখা দিলে (পাকিস্তানি জেনারেলরা যে চিন্তায় আচ্ছন্ন) তা মোকাবিলা করার যথেষ্ট প্রস্তুতি রাখার পাশাপাশি সৌদি আরবের প্রতিরক্ষায় ভূমিকা রাখার সামর্থ্য নেই। জাতিগোষ্ঠীগত যুদ্ধ বেধে গেলে পাকিস্তান যদি সুন্নি সৌদিদের সহায়তা করে, তাহলে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিয়া মুসলমান আছে, তারা ভয়ংকর বিক্ষুব্ধ শিয়া সেনাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারে। অন্যদিকে পাকিস্তানের অত্যন্ত শক্তিশালী রাজনৈতিক দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি বর্তমানে বিরোধী দলে থাকলেও ইরানের সঙ্গে তাদের অনেক স্বার্থসংশ্লিষ্ট মিল আছে।
কাজেই পাকিস্তানের সঙ্গে সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠতর সামরিক সহযোগিতার কৌশলগত মূল্য খুবই প্রশ্নসাপেক্ষ হলেও সৌদি আরবের হাতে বিকল্প আছে সামান্যই। মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুডকে সমর্থনের দায়ে কাতারের বহিষ্কার হওয়া এবং ওমানের স্বেচ্ছায় সরে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে জিসিসি বস্তুত ভেঙে পড়ছে। এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপারে সৌদি আরবের ক্রমবর্ধমান অবিশ্বাস যুক্ত হয়ে বিচ্ছিন্নতার বোধটি ক্রমেই বাড়ছে।
কোনো দেশের সামনে অস্তিত্বের সংকটের হুমকি দেখা দিলে সে মিত্র হিসেবে পাকিস্তানের কথা ভাববে—এটা বোধ হয় ভালো ভাবনা নয়। কিন্তু সৌদি আরব এখন এমনটাই ভাবছে, কারণ তার সময় ঘনিয়ে আসছে।
ইংরেজি থেকে অনূদিত; স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
মাই ইয়ামানি:
সৌদি-ইরাকি বংশোদ্ভূত মিসরীয় নৃতত্ত্ববিদ, গবেষক ও লেখক। ক্র্যাডল অব ইসলাম তাঁর
সাম্প্রতিক গ্রন্থ।
·
No comments:
Post a Comment