ফ্লোরিডা ইউনিভার্সিটির ফিন্যান্স বিভাগের প্রফেসর জন জানোউইচ মায়ামি হেরাল্ড পত্রিকার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে একটা মজার মন্তব্য করেছিলেন, ‘মানি লন্ডারিংয়ের সদর দরজা হচ্ছে ব্যাংকিং ব্যবস্থা...সরকার এই দরজা বন্ধ করে খুব ভালো একটা কাজ করেছে, কিন্তু পেছনের দরজাটি, অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হাট করে খোলা।’ কথাটা কেবল আমাদের দেশের জন্য নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্যও প্রযোজ্য।
realization
The Automated System for Customs Data
The Automated
System for Customs Data is
a computerized system
designed by the United Nations Conference on Trade and Development (UNCTAD) to
administer a country's customs. In 2004 there were more than 50 operational
projects with expenditures exceeding US$7 million. It is the largest technical
cooperation programme
of the UNCTAD, covering over 80 countries and 4 regional projects.
Accounting equation
Transaction
(1): Ray Neal decides to open a computer
programming service which he names Softbyte. On September 1, 2012, Ray Neal
invests $15,000 cash in the business.
Transaction (2): Purchase of Equipment for Cash. Softbyte
purchases computer equipment for $7,000 cash.
Transaction
(3): Softbyte purchases for $1,600 from Acme Supply Company
computer paper and other supplies expected to last several months. The purchase is made on account.
Upcoming
1. Processing of Investment Application proposal: Habib sir 193 page
2. 201 page: Security and mortgage
3. Documentation 211
4. Realization of Overdue investment -Habib sir 220
5. Artha Rin Adalat=2013, salient features-225
6. Insurance-258
7. Remittance in Fex- habib 412
8. Foreign Currency Accounts-406 page
9. Risk Management: Annual report 87,2014
3 Financial Crisis
Link of Prothom Alo
বিশ্ব
অর্থনীতির ফাটল ও বাংলাদেশ
ফারুক মঈনউদ্দীন | আপডেট: ০০:০৫, জুলাই ২৮, ২০১৪ | প্রিন্ট
সংস্করণ
যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা ছাড়িয়ে ২০০৭-এর আর্থিক সংকট থেকে উদ্ভূত
মন্দা যখন আরেক উন্নত বিশ্ব ইউরোপের আর্থিক ভিত নড়বড়ে করে দেয়, তত দিনে অনেক দেরি
হয়ে গেছে। দেরি হয়ে গেছে বলার কারণ, এই সংকটের বিষয়ে সতর্কবাণী করা হলেও তাতে কেউ কর্ণপাত
করেনি। এই সতর্কতার আগাম ঘোষণাকারীদের একজন ছিলেন রঘুরাম রাজন, তখনকার আইএমএফের প্রধান
অর্থনীতিবিদ এবং বর্তমানে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ফল্ট
লাইনস: হাউ ফ্র্যাকচারস স্টিল থ্রেটেন দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমি (২০১০) প্রকাশিত হওয়ার
পাঁচ বছর আগেই এক সম্মেলনে তিনি তাঁর প্রবন্ধে আর্থিক খাতের ভবিষ্যৎ বিপদগুলো তুলে
ধরে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে একটা বড় ধরনের সংকট নেমে আসতে পারে। সে সময় তাঁর এই
ভবিষ্যদ্বাণীতে কেউ কর্ণপাত করেনি, বরং ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি।
Fiscal and monetary policies management in Bangladesh
Monetary policy control of money supply, fiscal policy control spending or acquiring money from public.
Many of you have heard about the Great Depression in the 1930s. The hardships that the developed world went through led to some serious thinking into the realm of economics with a view to avoiding such depressions in future. Prior to 1930, even the greatest nations of the world did not have a systematic way of economic management. The next few decades saw the birth of modern macroeconomics with concepts such as monetary and fiscal policies emerging.
Humane banking for human capital
The daily star
12:00 AM, August 18, 2015 / LAST
MODIFIED: 12:00 AM, August 18, 2015
OPEN SKY
Humane
banking for human capital
When I
joined the first private bank of Bangladesh some 27 years ago, the definition
of a good banker remained as before: a star performer who returns home at night
walking with an unsteady gait almost like a drunkard. Unfortunately, the
definition still applies.
Probash zibon
Prothom alo 23 th January at following link
Probash zibon
Probash zibon
আমি যখন নেদারল্যান্ডসে
স্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি পাই, তখন আমার প্রবাসজীবন সাড়ে তিন বছরের। খুব বেশি দিন
নয়, কিন্তু আমার কাছে মনে হতো অনন্তকাল ধরে আমি দেশছাড়া! চক্ষুলজ্জার অনেক কিছুই
তখনো আমার চরিত্রে বিদ্যমান ছিল। তখনো কোনো বাঙালির বাসায় গেলে যদি খেতে বলত, আমি
খিদে নিয়েও বলতাম, খিদে নেই, খাব না! কেউ আমাকে দ্বিতীয়বার খেতে বলেছে বলে মনে
পড়ে না! সাধাসাধি তো পরের কথা। শুধু মনোয়ার ভাইয়ের স্ত্রী শাম্মী আপা জিজ্ঞেস
না করে টেবিলে খাবার দিয়ে সরাসরি এসে বলেছেন, ভাই, খেতে আসেন! তাঁর বলার মধ্যে
আন্তরিকতা এত বেশি মাত্রায় ছিল যে, না বলার কথা মনেই আসেনি। জানি না তিনি এখনো সে
রকম আছেন কি না? তাঁরা আরও ভালো জীবন যাপন করতে ইংল্যান্ড চলে গেছেন বেশ কয়েক বছর
আগে।
আমার স্ত্রী দেখি
বাসায় কেউ এলে এরকম করে বলে! ভালো লাগে তখন আমার খুব। যদিও চক্ষুলজ্জা কোনো কাজের
কিছু নয়। তবুও আমার মধ্যে বেশ ভালোভাবেই তা ছিল অনেক দিন। আজ আর নেই! নিজেকে বরং
অনেক ক্ষেত্রে বেশি চাঁছাছোলা মনে হয় এখন। কিন্তু মজার কথা হলো, আমি আমার সেই চক্ষুলজ্জাওয়ালা
সোহেলকে মাঝে মাঝে মিস করি। খারাপও লাগে! অকপটে সবকিছু বলতে পারাই যে কারও জন্য
মঙ্গলজনক। তাই উচিত হয়তো। কিন্তু নিজের ক্ষেত্রে সত্যি আমার মনে হয় ওরকম খানিকটা
লাজুক লাজুক থাকতে পারলেই ভালো হতো, এর পক্ষে ভালো কোনো যুক্তি আমি দিতে পারছি না,
শুধু নিজে অনুভব করি অনুভূতিটা
জানি না বোঝাতে পারলাম কি না৷ বোঝাতে পারতেই হবে এমন তো না৷ এগুলো তো একান্তই নিজস্ব অনুভূতি! জীবনের কঠিন বাস্তবতা আমার থেকে কেড়ে নিয়েছে মনের সৌন্দর্যটুকু পর্যন্ত! প্রবাসজীবন কী করে মানুষের সুকুমার বৃত্তিগুলো নষ্ট করে দেয়, আমার থেকে ভালো কেউ জানে না। হয়তো হেঁটে যাচ্ছি, কোনো কারণে আকাশের দিকে চোখ গেছে, দেখি মেঘমুক্ত ঝকঝকে নীল আকাশ! সুন্দর আকাশ থমকে দাঁড়িয়ে দেখার চোখ আজ আর আমার মধ্যে নেই! কোনো এক সময় ছিল, যে অনুভূতি আমি মনে করতে পারি না, কষ্ট লাগে খুব মাঝে মাঝে৷ এই কষ্ট শেয়ার করা যায় না৷
রেসিডেন্স হওয়ার আগে প্রতিদিন মনে হতো এই বুঝি আজই স্থায়ী হওয়ার চিঠি পাব মিনিস্ট্রি থেকে৷ লেটার বক্স খুলতাম দুরু দুরু বুকে৷ এমনি করে চলে গেছে সাড়ে তিনটি বছর। কাজেই এখন যাঁরা ওরকম চিঠি পাওয়ার অপেক্ষায় থাকেন, আমি তাঁদের কষ্টটা বুঝি। রেসিডেন্স হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মাথায় এল কখন দেশে যাব ৷ কিন্তু অফিশিয়াল ফরমালিটি শেষ করে টাকাপয়সা জোগাড় করতেও চলে যায় আরও বছর খানেক। ইউরোপের যে দেশগুলোতে সোশ্যাল সিকিউরিটি আছে অর্থাৎ আপনার কাজ না থাকলেও বেতনভাতা পাওয়ার বন্দোবস্ত আছে, নেদারল্যান্ডস এর মধ্যে অন্যতম। একটা দেশকে মানুষ যত সুন্দর করে গড়তে পারে, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ নেদারল্যান্ডস। ফুলের দেশ হিসেবে সবাই জানলেও সেই ফুল এখানে কী রকমভাবে আছে তা যিনি দেখেননি, তিনি বুঝবেন না। বেশির ভাগ লোক টিউলিপ গার্ডেনের ফটো বা ভিডিও দেখে মুগ্ধ হন। আসলে গোটা দেশটাই যেন ফুলে ফুলে মোড়ানো! মানুষ, ঘরবাড়িগুলো পর্যন্ত ফুলেল৷ যদিও বছরের প্রায় অর্ধেক শীতকাল থাকায় ওই সময়টাতে পথে-ঘাটের ফুলগুলো থাকে না। ফুল থাকবে কীভাবে? চারদিকে শুধু বরফ আর বরফ৷ এপ্রিলের ১ তারিখ থেকে টিউলিপ গার্ডেন দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয় মে মাসের ২১ তারিখ পর্যন্ত। সেটা দেখার মতোই জিনিস একটা৷ সাধারণত যেকোনো সুন্দর দৃশ্যের ছবি তুললে, ছবিতে জায়গাটাকে বাস্তবের চেয়ে সুন্দর দেখায় বা লাগে৷ কিন্তু আমার জীবনে দেখা এইটিই একমাত্র জায়গা, যা ছবির চেয়ে বাস্তবে অনেক বেশি সুন্দর৷ যে জায়গাটাতে টিউলিপ গার্ডেন অবস্থিত তার নাম লিস, ওই এলাকার মানুষ অনেক আগে থেকে ফুলচাষি এবং ওখানকার মাটি হলো টিউলিপের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী, দেশের অন্য জায়গার চেয়ে।
আমি রেসিডেন্স কার্ড পাওয়ার কয়েকদিন পর বাল্যবন্ধু টিপু তার ইতালির মাস তিনেকের সংসার গুটিয়ে আমার কাছে চলে আসে৷ যেদিন সে আসে, সেদিনের কথা কোনোদিন ভুলব না৷ প্রায় চার বছর দেশছাড়া৷ ইউরোপের অন্য দেশে আত্মীয়স্বজন থাকলেও তাদের সঙ্গে আমার তখনো দেখা হয়নি। সেই হিসেবে টিপু প্রথম প্রিয়জন, যাকে এত দিন পর কাছে থেকে দেখব৷ দেশে ফেলে আসা প্রিয়জনদের কাউকে গায়ে হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখতে পারব, এরকম ভাবনাতেই আমি আগের রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পর্যন্ত পারিনি! দুপুর বেলা হল্যান্ড স্পুর নামে হেগ শহরের একটা স্টেশনে টিপুর এসে নামার কথা। তালিস, ফ্রান্সের একটা অত্যাধুনিক ট্রেনে করে তার আসার কথা৷ খানিকটা টেনশনেও ছিলাম৷ কারণ টিপুর সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার মতো বৈধ কাগজপত্র ছিল না। ভাগ্যের সহায়তা ছাড়া কোনো গতি নেই! একসময় তালিস এসে থামল এবং আমাকে অবাক করে দিয়ে আমাদের সবার প্রিয় টিপু হেলেদুলে নেমে এল৷ আহা! প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে এত দিন পর দেখা, আবেগতাড়িত না হওয়া বরং অস্বাভাবিক! মাঝে কিছুদিন বাদ দিয়ে সেই থেকে টিপু আমার সঙ্গেই থেকেছে স্ত্রী আসা পর্যন্ত।
রেসিডেন্স হওয়ার পরপরই হেগ থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের ছোট একটা গ্রাম ওয়ের্ডেনে আমাকে বাসা দেওয়া হয়৷ যেদিন প্রথম বাসাটা দেখতে যাই, তখন শীতকাল৷ বরফ পড়ে চারদিক সাদা হয়ে আছে৷ আমার জন্য বরাদ্দ একতলা ছোট ধরনের বাসাটি বরফের নিচে একরকম চাপা পড়েছিল বলা যায়! এমনিতেই স্নো পড়ছে তো পড়ছেই, তার মধ্যে ওটা একটা খালি বাসা৷ বেশ কিছুদিন ওই বাসার হিটিং সিস্টেম কাজ করেনি৷ ছাদে বিশাল বরফের চাঁই হয়েছিল। তখন দুপুর ১২টা একটা হবে কিন্তু ওই বাসার আশপাশের ঘরবাড়ি, রাস্তা একেবারে জনশূন্য! আমি আর ওখানকার পৌরসভার, যিনি আমাকে বাসা বুঝিয়ে দিতে এসেছিলেন, তিনি ছাড়া কেউ নেই! হঠাৎ আমার মন ভীষণ খারাপ হলো, এরকম জনমনুষ্যহীন জায়গায় থাকব কী করে? যত দিন এ দেশে আছি, বড় শহরে দুনিয়ার মানুষের মাঝে থাকতাম আমি৷ হঠাৎ নির্জনতা তো ভালো লাগার কথাও নয়! পৌরসভার ভদ্রলোক চলে যাওয়ার পর আমি হতভম্ব হয়ে খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম৷ পরে হেগে ফিরে গিয়ে যেখানে ছিলাম, সেখানেই থাকি৷ ভাবটা এমন যেন ওয়ের্ডেনে আমি বাসা নিইনি! এক মাস চলে যাওয়ার পর হঠাৎ মনে হলো আরে, ওই বাসার ভাড়া তো দিতে হবে, চিঠিপত্র যা আসার তা ওই ঠিকানায় আসবে৷ কারণ ওটা তখন আমার অফিশিয়াল ঠিকানা। পরে টিপুকে নিয়ে চলে গেলাম থাকতে ওয়ের্ডেন। সে এক স্বপ্নের গ্রাম যেন! ছবির মতো সুন্দর! ওখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়ির সামনে-পেছনে ফুলের বাগান আছে। তবে আমার ধারণা, সারা দুনিয়াতেই গ্রামের মানুষগুলো শহরের মানুষদের চেয়ে বেশি সহজ-সরল ও প্রাণবন্ত! ওয়ের্ডেন গ্রামটিতে ওই সময় মানে ২০০১ সালে ১৫ হাজার মানুষ বাস করত৷ অনেকেই আমাদের চিনত৷ কারণ হাতে গোনা কয়েকজন মাত্র বিদেশি থাকত ওখানে। আর যে এরিয়াতে আমাদের বাসা, ওখানকার সব লোক দেখা হলে হাই, হ্যালো ছাড়াও বাড়তি সৌজন্যতা দেখাত। একটাই সমস্যা, তা হলো সন্ধ্যা ছয়টার পর ওখানে মনে হয় একটা ভূত দেখা যায় না! মানুষ দেখব কি? আমার স্ত্রী ২০০৩ সালে প্রথম দেশ থেকে এসে এই বাসাতেই উঠেছিল৷ আমি সকালে কাজে চলে যেতাম৷ সন্ধ্যায় ফিরতাম। স্ত্রীর সময় কাটানোই ছিল তখন প্রধান সমস্যা! তার মধ্যে সে কেবল বাংলাদেশ থেকে এসেছে৷ ভাষা জানে না, কালচার জানে না—ভয়ে সে বাসার ভেতর বসে থাকত, বুঝতাম মাঝে মাঝে কান্নাকাটিও করত৷
স্থায়ী হওয়ার আগে একটা কাপড় ঝোলানো হ্যাঙ্গার ফ্যাক্টরিতে কাজ করতাম, রেসিডেন্স কার্ড না হলে নেদারল্যান্ডসে বৈধভাবে কাজ করা যায় না৷ আগের সাড়ে তিনটি বছর এভাবেই লুকিয়ে লুকিয়ে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে হয়েছে। কন্ট্রোলের ভয়ে কেউ অবৈধভাবে কাজ দিতে চায় না। সরকার জানতে পারলে যিনি কাজ দিয়েছেন, তাঁকে অনেক জরিমানা করে৷ ওই সময়টাতে কত অদ্ভুত কাজ যে করেছি তার ইয়ত্তা নেই৷ বেশির ভাগ সময় রাতে ম্যাকডোনাল্ডস বা বার্গার কিং ক্লিনিং করতে হয়েছে। একটা নির্দিষ্ট লেভেল পর্যন্ত ক্লিন না থাকলে পরের দিন সকালে ওই সব ফাস্ট ফুড ওপেন করতে পারবে না। কখনো দুজন, কখনো তিন-চারজন মিলে রাতে ক্লিনিং করতাম৷ রাত ১২টায় শুরু করে ভোর চার-পাঁচটা পর্যন্ত কাজ করতে হতো। কিন্তু কাজ শেষ হলেও বাসায় যাওয়ার উপায় ছিল না৷ সকাল আটটায় ম্যানেজার এসে সব ঠিকমতো ক্লিন আছে কি না দেখে ওকে করলেই বাসায় যাওয়া যেত। একজন চালক ছিল, যার কাজ ছিল আমাদের ওই সব রেস্টুরেন্টে রাতে নামিয়ে দিয়ে যাওয়া৷ সকাল সাড়ে আটটার দিকে আবার এসে সবাইকে তুলে যার যার বাসার সামনে ড্রপ করে দেওয়া। বেশ কয়েকটা ক্লিনিং কোম্পানির অধীনে কাজ করেছি। একবার মাস তিনেক কাজ করেছিলাম হেগ থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরের ছোট একটা শহরে। ওই সময়টা কষ্ট গেছে খুব! রাত ১২টায় কাজ শুরু করার জন্য আমাকে ১০টার ট্রেন ধরতে হতো। কাজ খুব কঠিন ছিল না৷ ওখানে আবার ম্যানেজারের জন্য অপেক্ষা করতে হতো না৷ আমার সঙ্গে আর একজন ছিলেন ইন্ডিয়ান, নাম বলবীর৷ তিনি ওই ছোট শহর ব্রেডাতেই থাকতেন। রাত ১০টায় ওই রেস্টুরেন্ট বন্ধ হতো এবং বলবীর ভাই তখনই কাজ শুরু করে দিতেন আগেভাগে বাসায় চলে যাওয়ার জন্য। রাত তিনটা সাড়ে তিনটার মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যেত। বলবীরের কাছে চাবি থাকত৷ কাজ শেষে এক মিনিটও দেরি না করে উনি অ্যালার্ম সেট করে বাড়ি চলে যেতেন। আমি হেঁটে হেঁটে স্টেশনে যেতাম।
নেদারল্যান্ডসে প্রতি রাতে শহরভেদে রাত ১২টা-একটার মধ্যে সব ট্রেন স্টেশন বন্ধ হয়ে যায়৷ কোনো কারণে কোনো ট্রেন লেট থাকলে ওটা পরে এলে যাত্রীরা নেমে বের হয়ে যেতে পারেন৷ স্টেশনে ঢোকা যায় না সকাল ছয়টা পর্যন্ত। ছয়টার পর স্টেশনের গেট অটোমেটিক খুলে যায়। আমাদের দেশের যাঁরা জানেন না বা দেখেননি, তাঁরা সিস্টেমটা চিন্তাও করতে পারেন না৷ কারণ দেশে গেলে অনেকেই এরকম প্রশ্ন করে যে এসব দেশে পার্ক বা ফুটপাতে রাত কাটিয়ে দিনে লুকিয়ে লুকিয়ে কাজ করা যায় কি না? এখানে পার্ক, ফুটপাত বা ট্রেন স্টেশনে রাত কাটানোর কোনো উপায় নেই। ওসব জায়গায় লুকিয়ে থাকতে গেলেও আপনাকে কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ ধরে ফেলবে। অনেক সময় উইকএন্ডে লোকজন যদি বেশি মাতাল হয়ে রাস্তায় মাতলামি করে বা কোথাও অযাচিত বসে থাকে, তবে পুলিশ ধরে তাকে বাসায় দিয়ে আসবে এবং অতি অবশ্যই ওই মাতালের পকেটে জরিমানার টিকিট ঢুকিয়ে দেবে। তবে ভবঘুরেদের জন্য বড় শহরগুলোর স্টেশনগুলোতে খুবই অল্প পয়সায় রাত কাটানোর বন্দোবস্ত আছে৷ আড়াই ইউরো দিয়ে ওখানে রাতে ঘুমানো যায়, যেখানে বিছানা-বালিশ কিছুই নেই৷ শুধু ফ্লোরে ঘুমাতে হবে আপনাকে৷ রুমটা শীতাতপনিয়ন্ত্রিত এই যা৷ যিনি দেখেননি তাঁর জন্য বিষয়টা কল্পনা করাও খানিকটা মুশকিল।
যা-ই হোক ওই তিন মাস ছিল আমার সবচেয়ে কষ্টের সময়৷ প্রতিদিন আমি কাজ থেকে রাত চারটার দিকে স্টেশনের সামনে এসে দাঁড়াতাম, প্রচণ্ড তুষারপাতে জীবন শেষপ্রায়। স্টেশনের সামনে তখন টেলিফোন বুথ ছিল৷ এখন নেই বললেই চলে৷ কোনোমতে জ্যাকেট জড়িয়ে ফোন বুথে ঢুকে শীতের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করতাম৷ আর কাঁদতাম! ভাবতাম, জীবনে পাপ ছিল তাই এই জীবন পেয়েছি৷ পুরা তিনটি মাস এভাবে কেটেছে৷ আর ওটা এমন একটা সময়, যখন ইউরোপে পরিচিত সবাই ঘুমে৷ দেশে ফোন করে কথা বলব? মোবাইল ফোন দিয়ে কথা বলতে গেলে দুই মিনিটেই সব টাকা শেষ হয়ে যাবে! তা ছাড়া ওই কষ্টের কথা মা-বাবাকে বললে কিছুই হবে না শুধু ওনারা কষ্ট পাবেন৷ এই কষ্ট তো আমি আমার মা-বাবাকে দিতে পারি না। আমার প্রিয় মুন্নি খালাম্মা থাকেন আমেরিকার সিয়াটলে৷ তাঁকে প্রতিদিন ওই সময় মিসড কল দিতাম৷ তিনি ফোন করে আমার সঙ্গে দেড় দুই ঘণ্টা কথা বলতেন৷ যেকোনো কষ্ট দূর করতেই সময়টা খুব বড় বিষয়৷ সময়তে কেউ আপনাকে পাঁচ টাকা দিয়ে সাহায্য করলে যে উপকৃত হবেন, অসময়ে পাঁচ লাখ দিলেও দেখা যাবে কাজে লাগছে না। আমি মুন্নি খালার কথা আজীবন শ্রদ্ধার সঙ্গে মনে রাখব৷ স্টেশন খোলার আগের ওই দেড়-দুই ঘণ্টা ছিল আমার জন্য নরক! শুধু খালাম্মা ফোন করে আমাকে সাহস দিয়েছেন৷ আমি কষ্টের কথা বলতে বলতে প্রায় দিন কেঁদে ফেলতাম৷ উনিও কাঁদতেন আমার সঙ্গে৷ সহমর্মিতার কান্না৷ তাঁকে বলে রেখেছি, যদি কোনোদিন তাঁর দুঃসময় আসে, তবে যেন আমাকে স্মরণ করেন৷ আমি তাঁর জন্য জীবন লড়িয়ে দেব। কথার কথা না এটা, বাস্তবেই করব।
জানি না বোঝাতে পারলাম কি না৷ বোঝাতে পারতেই হবে এমন তো না৷ এগুলো তো একান্তই নিজস্ব অনুভূতি! জীবনের কঠিন বাস্তবতা আমার থেকে কেড়ে নিয়েছে মনের সৌন্দর্যটুকু পর্যন্ত! প্রবাসজীবন কী করে মানুষের সুকুমার বৃত্তিগুলো নষ্ট করে দেয়, আমার থেকে ভালো কেউ জানে না। হয়তো হেঁটে যাচ্ছি, কোনো কারণে আকাশের দিকে চোখ গেছে, দেখি মেঘমুক্ত ঝকঝকে নীল আকাশ! সুন্দর আকাশ থমকে দাঁড়িয়ে দেখার চোখ আজ আর আমার মধ্যে নেই! কোনো এক সময় ছিল, যে অনুভূতি আমি মনে করতে পারি না, কষ্ট লাগে খুব মাঝে মাঝে৷ এই কষ্ট শেয়ার করা যায় না৷
রেসিডেন্স হওয়ার আগে প্রতিদিন মনে হতো এই বুঝি আজই স্থায়ী হওয়ার চিঠি পাব মিনিস্ট্রি থেকে৷ লেটার বক্স খুলতাম দুরু দুরু বুকে৷ এমনি করে চলে গেছে সাড়ে তিনটি বছর। কাজেই এখন যাঁরা ওরকম চিঠি পাওয়ার অপেক্ষায় থাকেন, আমি তাঁদের কষ্টটা বুঝি। রেসিডেন্স হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মাথায় এল কখন দেশে যাব ৷ কিন্তু অফিশিয়াল ফরমালিটি শেষ করে টাকাপয়সা জোগাড় করতেও চলে যায় আরও বছর খানেক। ইউরোপের যে দেশগুলোতে সোশ্যাল সিকিউরিটি আছে অর্থাৎ আপনার কাজ না থাকলেও বেতনভাতা পাওয়ার বন্দোবস্ত আছে, নেদারল্যান্ডস এর মধ্যে অন্যতম। একটা দেশকে মানুষ যত সুন্দর করে গড়তে পারে, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ নেদারল্যান্ডস। ফুলের দেশ হিসেবে সবাই জানলেও সেই ফুল এখানে কী রকমভাবে আছে তা যিনি দেখেননি, তিনি বুঝবেন না। বেশির ভাগ লোক টিউলিপ গার্ডেনের ফটো বা ভিডিও দেখে মুগ্ধ হন। আসলে গোটা দেশটাই যেন ফুলে ফুলে মোড়ানো! মানুষ, ঘরবাড়িগুলো পর্যন্ত ফুলেল৷ যদিও বছরের প্রায় অর্ধেক শীতকাল থাকায় ওই সময়টাতে পথে-ঘাটের ফুলগুলো থাকে না। ফুল থাকবে কীভাবে? চারদিকে শুধু বরফ আর বরফ৷ এপ্রিলের ১ তারিখ থেকে টিউলিপ গার্ডেন দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয় মে মাসের ২১ তারিখ পর্যন্ত। সেটা দেখার মতোই জিনিস একটা৷ সাধারণত যেকোনো সুন্দর দৃশ্যের ছবি তুললে, ছবিতে জায়গাটাকে বাস্তবের চেয়ে সুন্দর দেখায় বা লাগে৷ কিন্তু আমার জীবনে দেখা এইটিই একমাত্র জায়গা, যা ছবির চেয়ে বাস্তবে অনেক বেশি সুন্দর৷ যে জায়গাটাতে টিউলিপ গার্ডেন অবস্থিত তার নাম লিস, ওই এলাকার মানুষ অনেক আগে থেকে ফুলচাষি এবং ওখানকার মাটি হলো টিউলিপের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী, দেশের অন্য জায়গার চেয়ে।
আমি রেসিডেন্স কার্ড পাওয়ার কয়েকদিন পর বাল্যবন্ধু টিপু তার ইতালির মাস তিনেকের সংসার গুটিয়ে আমার কাছে চলে আসে৷ যেদিন সে আসে, সেদিনের কথা কোনোদিন ভুলব না৷ প্রায় চার বছর দেশছাড়া৷ ইউরোপের অন্য দেশে আত্মীয়স্বজন থাকলেও তাদের সঙ্গে আমার তখনো দেখা হয়নি। সেই হিসেবে টিপু প্রথম প্রিয়জন, যাকে এত দিন পর কাছে থেকে দেখব৷ দেশে ফেলে আসা প্রিয়জনদের কাউকে গায়ে হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখতে পারব, এরকম ভাবনাতেই আমি আগের রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পর্যন্ত পারিনি! দুপুর বেলা হল্যান্ড স্পুর নামে হেগ শহরের একটা স্টেশনে টিপুর এসে নামার কথা। তালিস, ফ্রান্সের একটা অত্যাধুনিক ট্রেনে করে তার আসার কথা৷ খানিকটা টেনশনেও ছিলাম৷ কারণ টিপুর সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার মতো বৈধ কাগজপত্র ছিল না। ভাগ্যের সহায়তা ছাড়া কোনো গতি নেই! একসময় তালিস এসে থামল এবং আমাকে অবাক করে দিয়ে আমাদের সবার প্রিয় টিপু হেলেদুলে নেমে এল৷ আহা! প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে এত দিন পর দেখা, আবেগতাড়িত না হওয়া বরং অস্বাভাবিক! মাঝে কিছুদিন বাদ দিয়ে সেই থেকে টিপু আমার সঙ্গেই থেকেছে স্ত্রী আসা পর্যন্ত।
রেসিডেন্স হওয়ার পরপরই হেগ থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের ছোট একটা গ্রাম ওয়ের্ডেনে আমাকে বাসা দেওয়া হয়৷ যেদিন প্রথম বাসাটা দেখতে যাই, তখন শীতকাল৷ বরফ পড়ে চারদিক সাদা হয়ে আছে৷ আমার জন্য বরাদ্দ একতলা ছোট ধরনের বাসাটি বরফের নিচে একরকম চাপা পড়েছিল বলা যায়! এমনিতেই স্নো পড়ছে তো পড়ছেই, তার মধ্যে ওটা একটা খালি বাসা৷ বেশ কিছুদিন ওই বাসার হিটিং সিস্টেম কাজ করেনি৷ ছাদে বিশাল বরফের চাঁই হয়েছিল। তখন দুপুর ১২টা একটা হবে কিন্তু ওই বাসার আশপাশের ঘরবাড়ি, রাস্তা একেবারে জনশূন্য! আমি আর ওখানকার পৌরসভার, যিনি আমাকে বাসা বুঝিয়ে দিতে এসেছিলেন, তিনি ছাড়া কেউ নেই! হঠাৎ আমার মন ভীষণ খারাপ হলো, এরকম জনমনুষ্যহীন জায়গায় থাকব কী করে? যত দিন এ দেশে আছি, বড় শহরে দুনিয়ার মানুষের মাঝে থাকতাম আমি৷ হঠাৎ নির্জনতা তো ভালো লাগার কথাও নয়! পৌরসভার ভদ্রলোক চলে যাওয়ার পর আমি হতভম্ব হয়ে খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম৷ পরে হেগে ফিরে গিয়ে যেখানে ছিলাম, সেখানেই থাকি৷ ভাবটা এমন যেন ওয়ের্ডেনে আমি বাসা নিইনি! এক মাস চলে যাওয়ার পর হঠাৎ মনে হলো আরে, ওই বাসার ভাড়া তো দিতে হবে, চিঠিপত্র যা আসার তা ওই ঠিকানায় আসবে৷ কারণ ওটা তখন আমার অফিশিয়াল ঠিকানা। পরে টিপুকে নিয়ে চলে গেলাম থাকতে ওয়ের্ডেন। সে এক স্বপ্নের গ্রাম যেন! ছবির মতো সুন্দর! ওখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়ির সামনে-পেছনে ফুলের বাগান আছে। তবে আমার ধারণা, সারা দুনিয়াতেই গ্রামের মানুষগুলো শহরের মানুষদের চেয়ে বেশি সহজ-সরল ও প্রাণবন্ত! ওয়ের্ডেন গ্রামটিতে ওই সময় মানে ২০০১ সালে ১৫ হাজার মানুষ বাস করত৷ অনেকেই আমাদের চিনত৷ কারণ হাতে গোনা কয়েকজন মাত্র বিদেশি থাকত ওখানে। আর যে এরিয়াতে আমাদের বাসা, ওখানকার সব লোক দেখা হলে হাই, হ্যালো ছাড়াও বাড়তি সৌজন্যতা দেখাত। একটাই সমস্যা, তা হলো সন্ধ্যা ছয়টার পর ওখানে মনে হয় একটা ভূত দেখা যায় না! মানুষ দেখব কি? আমার স্ত্রী ২০০৩ সালে প্রথম দেশ থেকে এসে এই বাসাতেই উঠেছিল৷ আমি সকালে কাজে চলে যেতাম৷ সন্ধ্যায় ফিরতাম। স্ত্রীর সময় কাটানোই ছিল তখন প্রধান সমস্যা! তার মধ্যে সে কেবল বাংলাদেশ থেকে এসেছে৷ ভাষা জানে না, কালচার জানে না—ভয়ে সে বাসার ভেতর বসে থাকত, বুঝতাম মাঝে মাঝে কান্নাকাটিও করত৷
স্থায়ী হওয়ার আগে একটা কাপড় ঝোলানো হ্যাঙ্গার ফ্যাক্টরিতে কাজ করতাম, রেসিডেন্স কার্ড না হলে নেদারল্যান্ডসে বৈধভাবে কাজ করা যায় না৷ আগের সাড়ে তিনটি বছর এভাবেই লুকিয়ে লুকিয়ে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে হয়েছে। কন্ট্রোলের ভয়ে কেউ অবৈধভাবে কাজ দিতে চায় না। সরকার জানতে পারলে যিনি কাজ দিয়েছেন, তাঁকে অনেক জরিমানা করে৷ ওই সময়টাতে কত অদ্ভুত কাজ যে করেছি তার ইয়ত্তা নেই৷ বেশির ভাগ সময় রাতে ম্যাকডোনাল্ডস বা বার্গার কিং ক্লিনিং করতে হয়েছে। একটা নির্দিষ্ট লেভেল পর্যন্ত ক্লিন না থাকলে পরের দিন সকালে ওই সব ফাস্ট ফুড ওপেন করতে পারবে না। কখনো দুজন, কখনো তিন-চারজন মিলে রাতে ক্লিনিং করতাম৷ রাত ১২টায় শুরু করে ভোর চার-পাঁচটা পর্যন্ত কাজ করতে হতো। কিন্তু কাজ শেষ হলেও বাসায় যাওয়ার উপায় ছিল না৷ সকাল আটটায় ম্যানেজার এসে সব ঠিকমতো ক্লিন আছে কি না দেখে ওকে করলেই বাসায় যাওয়া যেত। একজন চালক ছিল, যার কাজ ছিল আমাদের ওই সব রেস্টুরেন্টে রাতে নামিয়ে দিয়ে যাওয়া৷ সকাল সাড়ে আটটার দিকে আবার এসে সবাইকে তুলে যার যার বাসার সামনে ড্রপ করে দেওয়া। বেশ কয়েকটা ক্লিনিং কোম্পানির অধীনে কাজ করেছি। একবার মাস তিনেক কাজ করেছিলাম হেগ থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরের ছোট একটা শহরে। ওই সময়টা কষ্ট গেছে খুব! রাত ১২টায় কাজ শুরু করার জন্য আমাকে ১০টার ট্রেন ধরতে হতো। কাজ খুব কঠিন ছিল না৷ ওখানে আবার ম্যানেজারের জন্য অপেক্ষা করতে হতো না৷ আমার সঙ্গে আর একজন ছিলেন ইন্ডিয়ান, নাম বলবীর৷ তিনি ওই ছোট শহর ব্রেডাতেই থাকতেন। রাত ১০টায় ওই রেস্টুরেন্ট বন্ধ হতো এবং বলবীর ভাই তখনই কাজ শুরু করে দিতেন আগেভাগে বাসায় চলে যাওয়ার জন্য। রাত তিনটা সাড়ে তিনটার মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যেত। বলবীরের কাছে চাবি থাকত৷ কাজ শেষে এক মিনিটও দেরি না করে উনি অ্যালার্ম সেট করে বাড়ি চলে যেতেন। আমি হেঁটে হেঁটে স্টেশনে যেতাম।
নেদারল্যান্ডসে প্রতি রাতে শহরভেদে রাত ১২টা-একটার মধ্যে সব ট্রেন স্টেশন বন্ধ হয়ে যায়৷ কোনো কারণে কোনো ট্রেন লেট থাকলে ওটা পরে এলে যাত্রীরা নেমে বের হয়ে যেতে পারেন৷ স্টেশনে ঢোকা যায় না সকাল ছয়টা পর্যন্ত। ছয়টার পর স্টেশনের গেট অটোমেটিক খুলে যায়। আমাদের দেশের যাঁরা জানেন না বা দেখেননি, তাঁরা সিস্টেমটা চিন্তাও করতে পারেন না৷ কারণ দেশে গেলে অনেকেই এরকম প্রশ্ন করে যে এসব দেশে পার্ক বা ফুটপাতে রাত কাটিয়ে দিনে লুকিয়ে লুকিয়ে কাজ করা যায় কি না? এখানে পার্ক, ফুটপাত বা ট্রেন স্টেশনে রাত কাটানোর কোনো উপায় নেই। ওসব জায়গায় লুকিয়ে থাকতে গেলেও আপনাকে কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ ধরে ফেলবে। অনেক সময় উইকএন্ডে লোকজন যদি বেশি মাতাল হয়ে রাস্তায় মাতলামি করে বা কোথাও অযাচিত বসে থাকে, তবে পুলিশ ধরে তাকে বাসায় দিয়ে আসবে এবং অতি অবশ্যই ওই মাতালের পকেটে জরিমানার টিকিট ঢুকিয়ে দেবে। তবে ভবঘুরেদের জন্য বড় শহরগুলোর স্টেশনগুলোতে খুবই অল্প পয়সায় রাত কাটানোর বন্দোবস্ত আছে৷ আড়াই ইউরো দিয়ে ওখানে রাতে ঘুমানো যায়, যেখানে বিছানা-বালিশ কিছুই নেই৷ শুধু ফ্লোরে ঘুমাতে হবে আপনাকে৷ রুমটা শীতাতপনিয়ন্ত্রিত এই যা৷ যিনি দেখেননি তাঁর জন্য বিষয়টা কল্পনা করাও খানিকটা মুশকিল।
যা-ই হোক ওই তিন মাস ছিল আমার সবচেয়ে কষ্টের সময়৷ প্রতিদিন আমি কাজ থেকে রাত চারটার দিকে স্টেশনের সামনে এসে দাঁড়াতাম, প্রচণ্ড তুষারপাতে জীবন শেষপ্রায়। স্টেশনের সামনে তখন টেলিফোন বুথ ছিল৷ এখন নেই বললেই চলে৷ কোনোমতে জ্যাকেট জড়িয়ে ফোন বুথে ঢুকে শীতের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করতাম৷ আর কাঁদতাম! ভাবতাম, জীবনে পাপ ছিল তাই এই জীবন পেয়েছি৷ পুরা তিনটি মাস এভাবে কেটেছে৷ আর ওটা এমন একটা সময়, যখন ইউরোপে পরিচিত সবাই ঘুমে৷ দেশে ফোন করে কথা বলব? মোবাইল ফোন দিয়ে কথা বলতে গেলে দুই মিনিটেই সব টাকা শেষ হয়ে যাবে! তা ছাড়া ওই কষ্টের কথা মা-বাবাকে বললে কিছুই হবে না শুধু ওনারা কষ্ট পাবেন৷ এই কষ্ট তো আমি আমার মা-বাবাকে দিতে পারি না। আমার প্রিয় মুন্নি খালাম্মা থাকেন আমেরিকার সিয়াটলে৷ তাঁকে প্রতিদিন ওই সময় মিসড কল দিতাম৷ তিনি ফোন করে আমার সঙ্গে দেড় দুই ঘণ্টা কথা বলতেন৷ যেকোনো কষ্ট দূর করতেই সময়টা খুব বড় বিষয়৷ সময়তে কেউ আপনাকে পাঁচ টাকা দিয়ে সাহায্য করলে যে উপকৃত হবেন, অসময়ে পাঁচ লাখ দিলেও দেখা যাবে কাজে লাগছে না। আমি মুন্নি খালার কথা আজীবন শ্রদ্ধার সঙ্গে মনে রাখব৷ স্টেশন খোলার আগের ওই দেড়-দুই ঘণ্টা ছিল আমার জন্য নরক! শুধু খালাম্মা ফোন করে আমাকে সাহস দিয়েছেন৷ আমি কষ্টের কথা বলতে বলতে প্রায় দিন কেঁদে ফেলতাম৷ উনিও কাঁদতেন আমার সঙ্গে৷ সহমর্মিতার কান্না৷ তাঁকে বলে রেখেছি, যদি কোনোদিন তাঁর দুঃসময় আসে, তবে যেন আমাকে স্মরণ করেন৷ আমি তাঁর জন্য জীবন লড়িয়ে দেব। কথার কথা না এটা, বাস্তবেই করব।
প্রসঙ্গ:
অর্থনীতি
আমাদের আবাসন খাতের বুদবুদ
ফারুক মঈনউদ্দীন | আপডেট:
০০:১২, সেপ্টেম্বর ০৭,
২০১৪ | প্রিন্ট সংস্করণ daily prothom alo
পাঠকদের স্মরণে থাকার
কথা, গত দশকের
মাঝামাঝি সময়ে আমেরিকার গৃহায়ণ খাতের বুদ্বুদ থেকে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দা কীভাবে বিশ্বকে নাড়া দিয়েছিল। জনগণের ঋণ গ্রহণকে উৎসাহী করার জন্য মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমাতে শুরু করলে
মানুষের মধ্যে ভোগ
ও বিনিয়োগের স্পৃহা বেড়ে যায়। এর প্রতিফলন ঘটে আবাসন
ঋণের ক্রমবর্ধমান চাহিদা থেকে। ব্যাংকগুলোও সুদের হার কমিয়ে আবাসন
ঋণের ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি করে, ফলে জনগণ অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করে ব্যাংক থেকে
ঋণ নিয়ে ঘরবাড়ি কিনতে থাকে। কিছু
ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক এসব ঋণ ডিসকাউন্টে কিনে নিয়ে মিউচুয়াল ফান্ড গঠন করে ডিবেঞ্চার ও শেয়ারবাজারে ছেড়ে দিতে থাকে। দীর্ঘমেয়াদি হোম লোনের পোর্টফোলিও নগদ বিক্রি হয়ে যাওয়ার ফলে ব্যাংকগুলোর হাতে নতুন ঋণ দেওয়ার জন্য আবার তহবিলের সংস্থান হয়ে যায় এবং তারা নিত্যনতুন কায়দায় যোগ্য-অযোগ্য সব ধরনের মানুষকেই হোম লোন বিলাতে থাকে। এর ফল ফলতে খুব বেশি
দেরি হয়নি।
Subscribe to:
Posts (Atom)